Image

Donation Detail

Image

যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয়

  • August 7, 2019
  • Wednesday 12:01:40 PM
Donation Now

মুহাম্মাদ ফজলুল বারী রোযার সাথে গোনাহমাফির সম্পর্ক খুব গভীর। রমযানের ফরয রোযা যেমন গোনাহ মিটিয়ে দেয় তেমনি বছরের বিভিন্ন সময়ের নফল রোযাও গোনাহ মিটিয়ে দেয়। রমযান মাস : দুই রমযানের মাঝের গোনাহ মিটিয়ে দেয় রমযান মাস আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রিয় মাস। এ মাস কুরআনের মাস। এ মাস রোযার মাস। সিয়াম-কিয়াম, তিলাওয়াত-মুনাজাতে মুখরিত থাকে এ মাস। তাই আল্লাহর কাছে এ মাস অনেক প্রিয়। বছর ঘুরে যখন এ মাস আসে এবং বান্দা আমলে মনোযোগী হয়, যেমন গত রমযানে হয়েছিল তখন আল্লাহ দুই রমযানের মাঝের গোনাহগুলো মাফ করে দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন- ...وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ. ...এক রমযান থেকে আরেক রমযান এর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফফারা- গোনাহ মোচনকারী; যদি ওই ব্যক্তি কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবীরা গোনাহ না থাকে)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩ উল্লেখ্য, এ প্রবন্ধের বর্ণনাসমূহে গোনাহ মাফ হওয়ার যে কথা রয়েছে, তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সগীরা গোনাহ; কারণ, কবীরা গোনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। রমযানের রোযা : গোনাহ পুড়িয়ে ছাই করে দেয় রমযান মাসে একদিকে বান্দা রহমতের বারিধারায় স্নাত হয়- প্রতি রাতে, প্রতি সকালে, সাহরীর মুহূর্তে, ইফতারীর মুহূর্তে; রহমত ঢেকে ফেলে বান্দাকে। অপরদিকে মাগফিরাতের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে দেয় বান্দার সব পাপ। রোযা সব পাপ জ্বালিয়ে দেয়, ভস্ম করে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৮ রমযানে কিয়ামুল লাইল : পাপের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে রমযান মাসের আমলসমূহের মধ্যে কিয়ামুল লাইল অন্যতম প্রধান আমল। তারাবী আর তাহাজ্জুদে কুরআন তিলাওয়াতের নূর নূরানী করে রাখে রমযানের রাত। সে নূরে স্নাত হয় বান্দার দেহ-মন। রাতের বিভিন্ন প্রহরে বান্দা দণ্ডায়মান হয় সালাতে, মশগুল হয় তিলাওয়াতে এবং সিজদাবনত হয় মহান প্রভুর সামনে। তখন গোনাহের কথা স্মরণ করে বান্দা অশ্রুসজল হয়- রহমতের আশায়, মাগফিরাতের প্রত্যাশায়। আল্লাহ তাআলাও তখন বান্দাকে ঢেকে নেন রহমতের চাদরে। মাফ করে দেন বান্দার গোনাহ-খাতা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ قامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের রাতে নামাযে দ-ায়মান হয়, তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭ লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইল : পুণ্যের পাহাড় আর ক্ষমার দরিয়া লাইলাতুল কদর। ওয়ামা আদ্রা-কা মা- লাইলাতুল কদ্র। লাইতুল কদরের ফযীলতের বিশালতা কী বলে প্রকাশ করা যায়? এক রাতের বিনিময়ে আল্লাহ সওয়াব দান করবেন- হাজার রাতের নয়; হাজার মাসের চেয়েও বেশি। এ রাতের যদি আমরা কদর না করি তো আর কোন রাতের কদর করব? এ এক রাতের তালাশে দশ রাত কেন শত রাতও তো কিছু না। এ রাতের কদরকারীর জন্য শুধু পুণ্যের পাহাড় নয়, ক্ষমার দরিয়াও। এখন প্রয়োজন শুধু কদর করার আর আমল ও ইসতিগফারের মাধ্যমে সে দরিয়ায় ¯œাত হয়ে পাপমুক্ত হওয়ার। সালাত-তিলাওয়াতে যে বান্দা রাতটিকে সজীব করবে আল্লাহ তার পূর্বের সব গোনাহ মাফ করে দিবেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ قامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাযে দণ্ডায়মান হবে, তার পূর্ববতী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০১ ইয়াওমে আরাফার রোযা : দুই বছরের গোনাহ মাফ এক দিন রোযা রাখার দ্বারা কত দিনের গোনাহ মাফ হতে পারে? দশ দিনের? এক শ দিনের? না, মাত্র এক দিনের রোযার বিনিময়ে আল্লাহ দুই বছরের গোনাহ মাফ করেন। আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ وَالسّنَةَ الّتِي بَعْدَهُ. আরাফার দিনের রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) বিগত বছরের এবং বর্তমান বছরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৯; (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২) আশুরার রোযা : বিগত বছরের কাফফারা আশুরার দিবসের রোযা এতটাই ফযীলতপূর্ণ যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিবসের খোঁজ রাখতেন এবং এর ফযীলত লাভের জন্য রোযা রাখতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে আশুরার রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন- مَا عَلِمْتُ أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَامَ يَوْمًا يَطْلُبُ فَضْلَهُ عَلَى الْأَيّامِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ وَلَا شَهْرًا إِلّا هَذَا الشّهْرَ. يَعْنِي رَمَضَانَ. আমার জানা মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য দিবসের রোযার তুলনায় আশুরার রোযার ফযীলত লাভের জন্য বেশি উদগ্রীব থাকতেন। তেমনি অন্য মাসের তুলনায় রমযান মাসের রোযার ব্যাপারেও। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৩২; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৩৭০ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার রোযার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন- يُكَفِّرُ السّنَةَ الْمَاضِيَةَ. এই রোযা বিগত বছরের কাফফারা হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২ হজ্ব গোনাহ মিটিয়ে দেয় : যেন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু যে শিশুটি আজকে জন্ম নিল তার কি কোনো গোনাহ থাকে? আমরা বলি, মাছূম বাচ্চা, নিষ্পাপ শিশু। তো হজ্ব বান্দার গোনাহ কিরূপ মিটিয়ে দেয় তার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে- যেন আজকে জন্ম নেওয়া শিশু। অর্থাৎ আজকে জন্ম নেওয়া শিশুটির যেমন কোনো গোনাহ থাকে না তেমনি যাকে আল্লাহ ‘হজ্জে মাবরূর’ নসীব করেছেন সেও আজকে জন্ম নেওয়া শিশুটির মত গোনাহমুক্ত হয়ে যায়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- مَنْ حَجّ لِلهِ فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمّهُ. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথা-বার্তা ও গোনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরবে, যেদিন সে জন্ম নিয়েছিল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫২১ তওয়াফ : প্রতি কদমে গোনাহ মাফ হয় তওয়াফ হজ্ব ও উমরার অন্যতম প্রধান রোকন। ইহরামের সাদা পোশাকে হজ্ব-উমরাকারীদের তওয়াফের দৃশ্য দেখলে যেন মনে হয়- এঁরা আল্লাহর রহমতের সাগরে ভাসছে। তাসবীহ-তাহলীল-দুআর গুঞ্জরণে মুখরিত হয় কা‘বা চত্তর। সাদা-কালো, আরব-অনারব একাকার হয়ে প্রভুর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রদক্ষিণ করছে কা‘বা। হাঁ, এসময় আল্লাহর রহমতের সাগরেও মওজ ওঠে। তাদেরকে আল্লাহর রহমত ঘিরে ফেলে এবং তওয়াফকারীর প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ নেকি দান করেন এবং গোনাহ মাফ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- لَا يَضَعُ قَدَمًا وَلَا يَرْفَعُ أُخْرَى إِلّا حَطّ اللهُ عَنْهُ خَطِيئَةً وَكَتَبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةً. (তওয়াফকারীর) প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ একটি গোনাহ মাফ করেন এবং একটি নেকি দান করেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৫৯ হজরে আসওয়াদ : গোনাহগুলো যেন শুষে নেয় হজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে আসা এক পাথর। হজরে আসওয়াদ অর্থ কালো পাথর অথচ পাথরটি ছিল দুধের চেয়েও সাদা। বনী আদমের গোনাহ দুধের চেয়ে সাদা এ পাথরটিকেই কালো বানিয়ে দিয়েছে। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- نَزَلَ الحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الجَنّةِ، وَهُوَ أَشَدّ بَيَاضًا مِنَ اللّبَنِ فَسَوّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ. হজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এসেছে। এটি দুধের চেয়েও সাদা ছিল। কিন্তু বনী আদমের গোনাহ এটিকে কালো বানিয়ে দিয়েছে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৮৭৭ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরে আসওয়াদ চুমু খেতেন। তাঁর অনুসরণেই সাহাবায়ে কেরাম হজরে আসওয়াদ চুমু খেতেনে। একবার ওমর রা. হজরে আসওয়াদের কাছে গেলেন এবং চুমু খেলেন। এরপর বললেন- إِنِّي أَعْلَمُ أَنّكَ حَجَرٌ، لاَ تَضُرّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبّلْتُكَ. আমি জানি, তুমি একটি পাথর মাত্র; উপকার-অপকার করার কোনো ক্ষমতা তোমার নেই। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চুমু খেতে দেখেছি বলেই আমি তোমাকে চুমু খেলাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫৯৭ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের নিকট দাঁড়াতেন এবং তা স্পর্শ করতেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- إِنّ مَسْحَهُمَا كَفّارَةٌ لِلْخَطَايَا. এ দুইয়ের স্পর্শ গোনাহ মিটিয়ে দেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৫৯ ইয়াওমে আরাফা : এদিন যে হেফাযত করবে দৃষ্টি, কান ও যবান এদিন হাজ্বী সাহেবান আরাফার ময়দানে সমবেত হন। উস্কোখুস্কো চুল আর ধুলোয় মলিন চেহারা নিয়ে খোলা ময়দানে তারা সমবেত। দুআ-ইস্তিগফার আর রোনাজারিতে কাটে তাদের সারাটা দিন। এহেন অবস্থায় আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে তাদের নিয়ে গর্ব করেন। আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে নেয়, ক্ষমার বারিধারায় স্নাত হয় তাঁরা। এমন পুণ্যময় একটি দিনে যে ব্যক্তি নিজের দৃষ্টি, কান ও যবানের হেফাজত করবে; অন্যায় দৃষ্টি আর কটূবাক্য থেকে বেঁচে থাকবে তাকেও আল্লাহ মাফ করে দিবেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ...রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- إِنّ هَذَا يَوْمٌ مَنْ مَلَكَ فِيهِ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ وَلِسَانَهُ غُفِرَ لَهُ. এটি এমন একটি দিন; যে ব্যক্তি এ দিনে তার কান, দৃষ্টি ও যবানের নিয়ন্ত্রণ করবে (গোনাহ থেকে বেঁচে থাকবে) আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩০৪১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৮৩২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৭৭৭; মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদীস ২৪৪১ উমরা : দুই উমরার মাঝের গোনাহ মাফ আমাদের দেশের অনেক মধ্যবিত্তেরও উমরার তাওফিক হয়। অনেক মানুষ রয়েছেন, যাদের হজ্বের সামর্থ্য নেই, কিন্তু কষ্ট করে উমরার টাকা যোগাড় করে ফেলেন। বহু কষ্টে জমানো অর্থ দিয়ে তারা বায়তুল্লাহ যিয়ারতের তৃষ্ণা মেটান, পূরণ করেন বুকের মাঝে লালিত দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আর যেসকল ধনীদের আল্লাহ বায়তুল্লাহর মহব্বত দান করেছেন তারা তো বছরের বিভিন্ন সময় ছুটে যান বায়তুল্লাহ্য়। তেমনি যারা আরবের বাসিন্দা বা বায়তুল্লাহর প্রতিবেশী তারাও। যাকে আল্লাহ অর্থ বা সামর্থ্য দিয়েছেন সাথে আল্লাহর মহব্বতও দান করেছেন সে কি বারবার বায়তুল্লাহর যিয়ারত না করে পারে? তাছাড়া উমরার মাধ্যমে আল্লাহ গোনাহ মাফ করেন। এক উমরা তার পূর্ববর্তী উমরার মাঝের গোনাহগুলো মিটিয়ে দেয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا. এক উমরা পূর্ববর্তী উমরার মাঝের গোনাহগুলোর কাফফারা হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯ বিপদে ধৈর্য ধারণ : গাছের পাতার মত ঝরে যায় গোনাহ মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরনের বিপদ আসে। কখনো রোগ-শোকে কাতর হয়ে যায় মানুষ। কখনো অর্থ-কষ্টে জর্জরিত হয় জীবন। বিপদ যেমনই আসুক- মুমিন ধৈর্য ধারণ করে। কারণ, মুমিন যদি বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ এর বিনিময় দান করেন এবং এর কারণে গোনাহ মাফ করেন। এমনকি শরীরে কাঁটা ফুটলেও এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা গোনাহ মাফ করেন। সায়েব ইবনে খাল্লাদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- مَا مِنْ شَيْءٍ يُصِيبُ الْمُؤْمِنَ حَتّى الشّوْكَةِ تُصِيبُهُ إِلّا كَتَبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةً أَوَ حَطّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً. মুমিন যে ধরনের বিপদেই আক্রান্ত হোক না কেন, এমনকি কাঁটা ফুটলেও এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা একটি নেকি লেখেন অথবা একটি গোনাহ মাফ করে দেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৫৬০; সহীহ মুসলিম (আয়েশা রা. থেকে), হাদীস ২৫৭২ একবার নবীজী প্রচ- জ্বরে কাঁপছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. নবীজীর কাছে হাজির হলেন। একপর্যায়ে নবীজী বললেন- مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى إِلّا حَاتّ اللهُ عَنْهُ خَطَايَاهُ، كَمَا تَحَاتّ وَرَقُ الشّجَر. মুমিন যখন কোনো (বিপদ বা) কষ্টে নিপতিত হয় তখন আল্লাহ এর বিনিময়ে তার গোনাহগুলো (ঝরিয়ে দেন) মাফ করে দেন যেমন (শীতকালে) গাছের পাতা ঝরে পড়ে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৪৭ বিপদে মুমিন শুধু ধৈর্য ধারণই করে না; বরং আল্লাহ যে অবস্থায় রেখেছেন তার উপরই শুকরিয়া আদায় করে, ফলে আল্লাহ তার গোনাহগুলো এমনভাবে মাফ করেন, যেন সে সদ্যভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশু, যার কোনো গোনাহই থাকে না। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করলে সুস্থ অবস্থায় সে যে নেক আমল করত তার সওয়াবও দান করা হয়। শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. ও সুনাবিহী রা. এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন? তিনি উত্তরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন, বললেন, আল্লাহর নিআমতের মধ্যে আছি। তা শুনে শাদ্দাদ রা. বললেন, তুমি গোনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেন- إِنِّي إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنًا، فَحَمِدَنِي عَلَى مَا ابْتَلَيْتُهُ، فَإِنّهُ يَقُومُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمّهُ مِنَ الْخَطَايَا، وَيَقُولُ الرّبّ عَزّ وَجَلّ: أَنَا قَيّدْتُ عَبْدِي، وَابْتَلَيْتُهُ، فَأَجْرُوا لَهُ كَمَا كُنْتُمْ تُجْرُونَ لَهُ وَهُوَ صَحِيحٌ. আমি যখন আমার কোনো মুমিন বান্দাকে বিপদে আক্রান্ত করি আর এ অবস্থার উপরও সে আমার প্রশংসা করে তখন সে (রোগের) বিছানা থেকে সেদিনের মত পাপমুক্ত হয়ে ওঠে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। এবং আল্লাহ ফিরিশতাদের বলেন, আমিই আমার বান্দাকে (আমল থেকে) বিরত রেখেছি এবং পরীক্ষায় নিপতিত করেছি; সুতরাং সে সুস্থ অবস্থায় যে নেক আমল করত এ অসুস্থ অবস্থায়ও সে নেক আমলের সওয়াব লিখতে থাক। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১১৮ মানুষের বিপদ কখনো হয় শারীরিক অসুস্থতার দ্বারা, কখনো সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে, আবার সন্তান-পরিবার আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমেও বিপদ আসে। তো যে ধরনের বিপদেই মুমিন আক্রান্ত হোক না কেন, এর বিনিময়ে তার গোনাহ মাফ হতে থাকে। গোনাহ মাফ হতে হতে একপর্যায়ে সে গোনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে। তাই যে কোনো ধরনের বিপদেই মুমিন হতাশ হয়ে যায় না; ধৈর্য ধারণ করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- لَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُؤْمِنِ أَوِ الْمُؤْمِنَةِ، فِي جَسَدِهِ، وَفِي مَالِهِ، وَفِي وَلَدِهِ، حَتّى يَلْقَى اللهَ وَمَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيئَةٍ. মুমিন পুরুষ, মুমিন নারী বিপদাক্রান্ত হতে থাকে; সে বিপদে কখনো আক্রান্ত হয় শরীর, কখনো সম্পদ, কখনো সন্তান-সন্ততি। (এসকল বিপদে মুমিন ধৈর্য ধারণ করে, ফলে আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করতে থাকেন।) একপর্যায়ে সে গোনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৮৫৯ মুসাফাহা : হৃদয়ের বন্ধন জোড়ে, গোনাহ মাফ করে এক মুসলিমের সাথে আরেক মুসলিমের সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের পর প্রথম কাজই হল মুসাফাহা। এটা মুসলিমের সংস্কৃতি। দুই হাতের মিলন হৃদয়কেও ছুঁয়ে যায়, জুড়ে দেয় হৃদয়ের বন্ধন, ঘুঁচে যায় দূরত্ব। এক মুমিন আরেক মুমিনের এমনই কাছাকাছি থাকবে, অন্তরঙ্গ থাকবে- এমনটিই আল্লাহ চান। ফলে মুসাফাহা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দের আমল। এর কারণে আল্লাহ খুশি হন এবং তাদের মাফ করে দেন। বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا. সাক্ষাৎকালে দুজন মুসলিম যখন মুসাফাহা করে তখন তারা পৃথক হওয়ার আগেই তাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭২৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২১২ খাবারও খেলাম গুনাহ্ও মাফ হল আমার সামনে গরম গরম সুস্বাদু খাবার উপস্থিত। এত সুস্বাদু খাবার আমার সামনে এসেছে অথচ এর জন্য আমি সামান্যই কষ্ট স্বীকার করেছি। একেই বলে রিযিক, যা বান্দাকে আল্লাহ দান করেন। প্রতিদিন, প্রতি বেলা দান করেন। তো বান্দার কি উচিত নয় তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা? আল্লাহ চান বান্দা যেন আল্লাহ্র রিযিক গ্রহণ করে কৃতজ্ঞ হয়, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। আবার আল্লাহ্রই দেওয়া রিযিক গ্রহণ করে বান্দা যদি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তাহলে আল্লাহ খুশী হন এবং বান্দাকে মাফ করে দেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- مَنْ أَكَلَ طَعَامًا فَقَالَ: الحَمْدُ لِلهِ الّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. যে ব্যক্তি কোনো খাবার খাওয়ার পর বলে- الحَمْدُ لِلّهِ الّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوّةٍ. (সকল প্রসংসা আল্লাহ্র, যিনি কোনো প্রকার কষ্ট-মেহনত ছাড়া আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন, এ রিযিক দান করলেন।) আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৫৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০২৩