Donation Detail
মাহে রমযানের সমাপ্তির পর পয়লা শাওয়াল আমরা ঈদ উদ্যাপন করেছি। এক মাস রোযা, তারাবী ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীর পর ঈদের দিন মুসলমানের আনন্দের দিন। এই আনন্দ আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে ক্ষমা ও মাগফিরাতের প্রত্যাশার আনন্দ। ইবাদত-বন্দেগী ও নেক আমলের তাওফীকের আনন্দ। এই আনন্দ যেন আমাদের জীবনে সারা বছর স্থায়ী হয়, মাগফিরাত ও তাওফীকের আসমানী দানে আমাদের জীবন ও কর্ম যেন সমুজ্জ্বল হয়- নিশ্চয়ই তা প্রত্যেক মুমিন বান্দার প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণে আমাদের নিজ নিজ সাধ্য অনুসারে রমযান ও ঈদের শিক্ষা ধারণ করে পথ চলতে হবে। রমযানের মূল শিক্ষা তাকওয়া। আল্লাহর নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকা। কাঁটা-ঝোপ বেষ্টিত পথের মধ্য দিয়ে আঁচল বাঁচিয়ে চলার মতো গুনাহ ও পাপাচারের হাতছানি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে জীবনের পথে চলা। এই তো তাকওয়া। কাজেই তাকওয়া হচ্ছে সারা জীবনের কর্ম। জীবনের সময় আপাত চিন্তায় দীর্ঘ মনে হলেও তা খুব দীর্ঘ নয়। সংক্ষিপ্ত ও ক্ষণস্থায়ী। এই সংক্ষিপ্ত জীবনকে দীর্ঘ মনে করার কারণেই তো মানুষ লম্বা লম্বা প্রত্যাশা করে, গুনাহের পথ ছেড়ে আল্লাহর ফরমাবরদারির পথে আসতে দেরি করে, আজ নয় কাল করে। এরই মধ্যে দুনিয়ার জীবন ফুরিয়ে যায়। আখিরাতের জীবন শুরু হয়ে যায়। জীবন-রজনীকে দীর্ঘ রজনী বলে মন্ত্রণা দিয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে রাখাই তো শয়তানের কাজ। ‘আলাইকা লায়লুন তবীলুন ফারকুদ’ রাত এখনো অনেক বাকি, ঘুমিয়ে থাকো- এই তো শয়তানের মন্ত্রণা। এভাবে নিদ্রার ঘোরে কখন যে সময় চলে যায় তা যাওয়ার আগে টের পাওয়া যায় না। এবারের রমযানের মতো কয়টি রমযান আমাদের জীবন থেকে গত হয়েছে? আর কয়টি রমযান আমরা পেতে পারি? সে কয়টি গত হতেও কয়দিন লাগবে? কাজেই এখনি আমাদের জেগে উঠতে হবে। তাকওয়ার পথে পথচলা আরম্ভ করতে হবে। মাহে রমযান আমাদের জন্য আল্লাহর আদেশে পানাহার তথা অন্য সময়ে সাধারণভাবে যে চাহিদা পূরণ বৈধ ছিল তা পূরণ থেকে বিরত থাকার যে বিধান দান করেছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনার্থে অন্যায় অবৈধ জিনিস বর্জনের মাধ্যমে সেই শিক্ষার অনুসরণ বছরব্যাপী ও জীবনব্যাপী করে যেতে হবে। কিন্তু এর জন্যে তো প্রয়োজন হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধের জ্ঞান। তাকওয়ার পথে চলার জন্যে দ্বীনী ইলমের বিকল্প নেই। ইলম ছাড়া তাকওয়া অবলম্বনের চিন্তা নৌকা ছাড়া নদী পার হওয়ার চিন্তার মতো। শেষোক্ত চিন্তাটি কেউ না করলেও প্রথমোক্ত চিন্তা কারো কারো মধ্যে পাওয়া যায়। এর কারণ হতে পারে ‘তাকওয়া’ সম্পর্কে খণ্ডিত বা ভুল ধারণা। শরীয়তের হুকুম-আহকাম তো জীবনের দু-চারটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিস্তৃত। তাই আল্লাহর ফরমাবরদারি ও নাফরমানীর বিষয়টিও জীবনজুড়ে বিস্তৃত। তাকওয়ার ক্ষেত্রও তাই গোটা জীবন এবং জীবনের সকল কর্ম। জীবনের সকল কাজে শরীয়তের হুকুম-আহকাম জেনে সে অনুযায়ী চলার নাম তাকওয়া। তাহলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, তাকওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীয়তের হুকুম-আহকামের ইলম। বস্তুত বিশুদ্ধ ইলম হচ্ছে আমাদের দ্বীনী জীবন গঠনের অন্যতম প্রধান নিয়ামক। এছাড়া দ্বীনদারি, তাকওয়া, পরহেযগারী গঠনের কোনোই সুযোগ নেই। একারণে খোদ শরীয়তের বিধানেও দ্বীনী ইলম অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বীনী ইলম অর্জনকে গুরুত্বহীন বা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা মারাত্মক ভুল। এটি সকল প্রকার বিভ্রান্তির চোরা পথ। একারণে আমাদের প্রাজ্ঞ মনীষীগণ সবসময় দ্বীনী ইলম অর্জনে প্রয়াসী থাকার উৎসাহ দান করেছেন। আমরা যদি আমাদের জীবনকে তাকওয়ার বিভায় সমুজ্জ্বল করতে চাই তাহলে অবশ্যই দ্বীনী ইলম অর্জনে প্রয়াসী হতে হবে। ইলম অর্জনের স্বাভাবিক ও নিরাপদ পন্থা হচ্ছে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে অর্জন করা। জীবনের সাধারণ দ্বীনী বিধানসমূহ এবং প্রত্যেকের নিজ নিজ পেশা ও কর্মের প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান ভালোভাবে জেনে নেওয়া কর্তব্য। কিছু বিষয় আছে, যা অল্প সময়ে জেনে নেওয়া যায় আর কিছু বিষয় আছে, যা সময় লাগিয়ে রপ্ত করতে হয়। একারণে দ্বীনী ইলম অর্জনের জন্য শুধু মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যথেষ্ট নয়, উলামায়ে কেরামের সঙ্গে থাকা, তাঁদের কাছ থেকে বুঝতে থাকা, শিখতে থাকা প্রয়োজন। সঙ্গ ও সাহচর্যের দ্বারা মানুষের রুচি ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হয়, স্বভাব ও আচরণ গঠিত হয়, দ্বীনী জিন্দেগীর জন্যে যা খুবই প্রয়োজন। হাদীস শরীফে সঙ্গী নির্বাচনের বিষয়ে সতকর্তা অবলম্বনের শিক্ষা দান করা হয়েছে। ভালো সঙ্গী মানুষকে ভালোর দিকে চলতে সহায়তা করে আর মন্দ সঙ্গী মানুষকে মন্দের পথে নিয়ে যেতে পারে। একারণে মুত্তাকী পরহেযগার উলামায়ে কেরামের সঙ্গ ও সাহচর্য অবলম্বন করা কাম্য। মাহে রমাযান এবারের মতো আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেও আমাদের জন্য রেখে গেছে তাকওয়ার শিক্ষা। সেই শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়িত হোক, তাকওয়ার আলোয় আমাদের জীবন ও কর্ম উদ্ভাসিত হোক- এই শুভকামনা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।